সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো::
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ৩ নম্বর রুদাঘরা ইউনিয়নের রুদাঘরা গ্রামের হরি নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন আবুল কাশেম গোলদার। তিনি ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর রুদাঘরা ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদের পাড়ে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাড় ভাঙলে শতাধিক কৃষকের জমি নদে বিলীন হয়ে যাবে। সে কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, রুদাঘরা ওয়ার্ডের রুদাঘরা গ্রামের ১ কিলোমিটার দীর্ঘ গোলদার বাড়ি ঘাট সড়কটি পাকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে সড়কটি পাকাকরণের কাজ পেয়েছেন সুমনা এন্টার প্রাইজের মালিক আবু রাসেল। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন মো. নাজমুল। ওই সড়কে বালু দেওয়ার ঠিকাদারি নিয়েছেন আবুল কাশেম গোলদার। তিনি রুদাঘরা ইউনিয়নের ২ নম্বর রুদাঘরা ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ৮দিন ধরে বালু উত্তোলন করছেন। সড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হরি নদ থেকে স্যালো মেশিন দিয়ে তৈরি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে সরাসরি সড়কে দিচ্ছে। এরজন্য তিনি প্রশাসনের কোনো প্রকার অনুমতি নেননি। নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা পাড়ের ছোট ছোট ভাঙন ধরেছে। এভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকলে দ্রুত নদের পাড়ে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেবে। তখন নদের পাড়ে শতাধিক কৃষকের জমি নদে বিলীন হয়ে যাবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাঝ নদে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেই বালু পাইপের মাধ্য সড়কে এনে ফেলা হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের মালিক আছাদুল গাজী বলেন, আমাদের বালু তুলার জন্য চুক্তি হয়েছে আবুল গোলদারের (আবুল কাশেম গোলদার) সঙ্গে। তার কথাতে আমরা বালু তুলে দিচ্ছি। এ সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে তার (আবুল গোলদারের) সঙ্গে কথা বলেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এভাবে বালু তুলতে থাকলে খুব শিগগির নদে ভাঙন শুরু হবে। তখন কৃষকদের সর্বস্বান্ত হতে হবে। আর নদ থেকে যে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা বেশির ভাগই পলিকাঁদা। এই বালু দিয়ে কাজ করলে অল্প দিনেই সড়কটি নষ্ট হয়ে যাবে। পানিতে যাবে কোটি টাকা। আর এলাকাবাসীর দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সড়কের বালু দেওয়ার ঠিকাদারি নিয়েছেন আবুল কাশেম গোলদার। তিনি মসজিদ কমিটির নামে কাজ চালিয়ে দিচ্ছেন। যাতে কোন সমস্যা না হয়। কেউ এর প্রতিবাদ করতে না পারে। তিনি এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় জেনেশুনে এলাকার মানুষ এই অন্যায় মেনে নিচ্ছে।
বরুণা এলাকার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে দ্রুত নদের পাড়ে ভাঙন শুরু হবে। তখন নদের পাড়ের কৃষি জমির বিলীন হয়ে যাবে। সর্বস্বান্ত হবে শতাধিক কৃষক। দ্রুত এটি বন্ধ হওয়া উচিত।
আবুল কাশেম গোলদার বলেন, আমি এই কাজের মধ্যে জড়িত নই। সড়কের পাশে একটি মসজিদ (গোলদারবাড়ি জামে মসজিদ) রয়েছে; সেই মসজিদ কমিটি এই কাজ করছে। আমি ওই মসজিদ কমিটির কেউ না। এই কাজ থেকে যে লভ্যাংশ হবে তা মসজিদ কমিটি নেবে।
গোলদারবাড়ি জামে মসজিদের সভাপতি ও এলজিইডি খুলনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জহুরুল হক গোলদার বলেন, মসজিদ কমিটির এ রকম অন্যায় কাজ করতে পারে না। এ কাজের সঙ্গে মসজিদ কমিটি কোন ভাবেই জড়িত নয় তাহলে আমি জানতাম। মসজিদ কমিটি নাম ব্যবহার করে কেউ সুবিধা নিচ্ছে।
ঠিকাদার মো. নাজমুলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এলজিইডি ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, ১ কিলোমিটার সড়কটি পাকাকরণের জন্য প্রায় ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বালুর বিষয়ে আমি অভিযোগ পেয়েছি। এখন বালুর নমুনা এনে পরীক্ষা করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনা-১ উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। তাছাড়া বালু উত্তোলনের বিষয়ে অনুমতি দেন জেলা প্রশাসন। তারপরও খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসাম্মত শাহানাজ বেগম বলেন, নদের তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমার জানা নেই। এ কাজ যদি কেউ করে তবে তা বেআইনি। আমি এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।